কাঠের দরজার যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের সেরা টিপস
কাঠের দরজার যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের সেরা টিপস সম্পর্কে জানতে আজকের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। কাঠের দরজা বাড়ির সৌন্দর্য ও নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন টেকে, এ জন্য নিয়মিত যত্ন নেওয়া জরুরি। স
ঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না করলে, কাঠ সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং দরজার কার্যক্ষমতা কমে যায়। বাংলাদেশে প্রচলিত কাঠের দরজার রক্ষণাবেক্ষণে বেশ কয়েকটি উপায় দেখা যায়, যেমন আর্দ্রতা, পোকামাকড় বা ন্যাচারাল ক্ষয়। এ সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হলে সঠিক যত্নের পদ্ধতি জানা জরুরি। আজ আমি সেই ক্ষুদে টিপসগুলো শেয়ার করব, যাতে আপনার কাঠের দরজা থাকে সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী।
কাঠের দরজার যত্নে সঠিক কাঠ বেছে নিন
আমরা যদি কাঠের দরজাকে টেকসই রাখতে চাই এবং কাঠের দরজার স্থায়িত্ব বাড়াতে চাই তবে সর্বপ্রথম আমাদেরকে কাঠের দরজা বানানোর জন্য ভালো মানের কাঠ বেছে নিতে হবে। আপনি আপনার কাঠের দরজা কে বেশি দিন টেকসই এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে চাইলে ভালো জাতের আসবাবপত্রের কাঠ নির্ধারণ করতে হবে।
বাজারে এখন অনেক ধরনের উন্নত মানের এবং ভালো জাতের কাঠ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। চলুন তাহলে সেগুলোর মধ্যে কিছু উন্নত মানের কাঠের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক। সেগুন কাঠ, সলিড ওক কাঠ, পাইন কাঠ, মেহগনি কাঠ, চেরি কাঠ, আখরোট কাঠ আরো কিছু। এগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
শাল কাঠ: ভালো এবং উন্নত মানের কাঠ অন্যতম কাঠ হল শাল। কাঠ শাল কাঠ অত্যন্ত শক্তিশালী এক ধরনের আসবাবপত্র তৈরীর কাঠ। যা দিয়ে আমরা আমাদের ঘরের যে কোন আসবাবপত্র দরজা জানালা তৈরিতে ব্যবহার করতে পারব নিশ্চিন্তে। শাল কাঠ অত্যন্ত টেকসই এবং স্থায়িত্ব সম্পন্ন এক ধরনের কাঠ ঘুন প্রতিরোধী কাঠ গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম কাঠ হল শাল কাঠ।
গামারি কাঠ: ঘরের আসবাবপত্র এবং দরজা জানালা তৈরীর জন্য আরও একটি স্থায়িত্বশীল কাঠ হলো গামারি কাঠ।
সেগুন কাঠ: যেকোনো ধরনের আসবাবপত্র এবং জানালা দরজা তৈরি করার জন্য অত্যন্ত টেকসই। ওয়াটারপ্রুফ এবং ঘুন প্রতিরোধী কাঠ হলো সেগুন কাঠ ভালো মানের কাঠ হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত লাভ করেছে সেগুন কাঠ।
মেহগনি কাঠ: আমাদের দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং টেকসই কাঠের মধ্যে একটি হলো মেহগনি কাঠ
পাইন: সহজে পাওয়া যায়, দামও কম। দ্রুত ক্ষয় হয়, তাই নিয়মিত পরিচর্যার দরকার।
সিডার: ঘ্রাণে সুন্দর, পোকা থেকে রক্ষা করে। বেশ টেকসই।
ওক কাঠ: কাঠের দরজা জানালা বানানোর জন্য আরও একটি টেকসই কাঠ হল ওক কাঠ। শক্ত ও ভারি, দীর্ঘদিন টেকে। দাম একটু বেশি।
এছাড়াও টেকসই কাঠের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে আখরোট কাঠ চেরি কাঠ পাইন কাঠ ইত্যাদি। প্রতিটি কাঠের বিভিন্ন ধরণের সুবিধা আছে, তবে প্রতিটি পদ্ধতি ও যত্নও আলাদা।
কাঠের দরজা নিয়মিত পরিষ্কার করুন
কাঠের দরজার যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবং কাঠের দরজা কে দীর্ঘস্থায়ী টেকসই রাখার জন্য সর্বপ্রথম আমাদেরকে কাঠের দরজা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। কাঠের দরজায় ধুলো ময়লা জমে থাকলে সেটি কাঠের দরজার রং ও বিভিন্ন উপাদানের ক্ষতি করে। কাঠের দরজা যেভাবে পরিষ্কার করবেন:
- একটি মাইক্রো ফাইবার কাপড় দিয়ে আপনার কাঠের দরজা থেকে ধুলো ময়লা মুছে ফেলতে পারেন ধুলা জমলে কাঠের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
- একটি নরম কাপড় মৃদু সাবান এবং কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে কাঠের দরজা মুছবেন। তবে এক্ষেত্রে কাঠের দরজায় অতিরিক্ত পানি যেন লেগে না থাকে। সেজন্য অতিরিক্ত পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- ভেজা কাপড় দিয়ে কাঠের দরজা পরিষ্কার করার পর অবশ্যই শুকনো কাপড় দিয়ে অতিরিক্ত পানি দরজা থেকে মুছে ফেলুন। এতে করে কাঠের দরজায় কোন প্রকার আর্দ্রতা থাকবে না। এর ফলে আপনার দরজা হবে টেকসই।
আপনার দরজার কাঠ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পরিচর্যা করুন
সঠিক পণ্য নির্বাচন জরুরি। কমপক্ষে ছয় মাসে একবার, পরিবেশ অনুযায়ী, কাঠে তেল বা ওয়েকার লাগান। এতে কাঠের গুণাগুণ বাড়ে, ক্ষয় কম হয়।
মৌসুমভিত্তিক যত্ন-
শীত ও বর্ষাকালে আরও বেশি যত্ন নিন। এ সময় আর্দ্রতা বাড়ে, যা কাঠের ক্ষয় বাড়ায়। আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য দরজার পাশে উপযুক্ত সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
ক্ষয়, গন্ধ ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা-
প্রাকৃতিক উপায়ে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করুন। লেবুর রস, বাহারি তেল বা ভিনেগার দিয়ে পরিষ্কার করুন। রাসায়নিক প্রতিরোধক স্প্রে ও পোকামাকড়ের প্রতিরোধক পণ্যও ব্যবহার করতে পারেন।
অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না হয়-
দরজায় খুব বেশি চাপ বা ধাক্কা এড়ান। দরজা খুললে সাবধানে খুলুন।
দরজার গেটার ও হার্ডওয়্যার-
হার্ডওয়্যার যেন পরিষ্কার ও মসৃণ থাকে, সেটা দেখুন। এইভাবে দরজার জন্য স্বাচ্ছন্দ্য ও স্থিতিশীলতা বাড়ে।
ধুলো ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো-
বাড়ির চারপাশে ধুলা ও জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে রক্ষা করুন। দরজার ফ্রেমের গোড়ায় বা পাশে সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন।
প্রাকৃতিক ও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে কাঠের দরজার যত্ন
এই উপাদানগুলো প্রাকৃতিক, দাগ বা গন্ধও কমায়। সহজে তৈরি হয়, আর ক্ষতিকর নয়। যেমন: লেবুর রস, তেল ও ভিনেগার দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে দরজা পরিষ্কার করুন। এতে কাঠের উপাদান সুন্দর ও সংরক্ষিত থাকে।
আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে রক্ষণাবেক্ষণ
অ্যান্টি-ফঙ্গাল বা অ্যান্টি-স্প্রের স্প্রে লাগান। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় যত্নের ব্যবস্থা যেমন স্মার্ট সিস্টেম বা অটো-লকিং সিস্টেমও ব্যবহার করতে পারেন। এতে বাড়ির দরজা বেশি দিন টেকে।
কাঠের দরজার সাধারণ কাঠামো ও উপাদান-
বেশিরভাগ কাঠের দরজার মূল উপাদান হলো:
- ফ্রেম: দরজার মূল স্ট্রাকচার।
- প্যানেল: দরজার সামনে ও পেছনে থাকা অংশ।
- হার্ডওয়্যার: হ্যান্ডেল, হুক ও লক ইত্যাদি।
সঠিক উপকরণ ও কাঠের গুণাগুণ অনুযায়ী, দরজার স্থায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়।
কাঠের দরজার যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের আরো টিপস
কাঠের দরজার যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- কাঠের দরজার আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- রোদ থেকে কাঠের দরজাকে রক্ষা করুন।
- পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে আপনার কাঠের দরজাকে সুরক্ষিত রাখুন।
- দরজার কবজা ও লক পরীক্ষা করুন।
- কাঠের পালিশ বা বার্নিশ ব্যবহার করুন।
লেখক এর শেষ মন্তব্য- কাঠের দরজার যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের সেরা টিপস
নিয়মিত যত্ন ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ দিয়ে আপনার কাঠের দরজা দীর্ঘস্থায়ী ও সুন্দর থাকতে পারে। পরিষ্কার রাখা, উপযুক্ত তেল ও লেপ দেওয়া ও মৌসুম অনুযায়ী যত্ন নিলে কিছুই কি বাধা। পেশাদার টিপস ও আধুনিক প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে পারেন। সবশেষে, এ সব অভ্যেস গড়ে তুলো, যাতে বাড়ির সৌন্দর্য আর নিরাপত্তা দুটোই বজায় থাকে। কাঠের দরজার যত্নে সচেতন থাকুন, এই সহজ তবে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে সাদা, ঝকঝকে ও টেকসই দরজা পাবেন একদম দীর্ঘদিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url