বৃষ্টির পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো- বৃষ্টির পানি পান কি নিরাপদ

জানেন কি, বৃষ্টির পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো? বৃষ্টির পানি অবশ্যই স্বাস্থ্যকর হতে পারে যদি সঠিকভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিশোধন করা হয়। 
তবে, অপ্রীতিকর ফলাফল থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত জল পরীক্ষা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পরিবেশের সাধারণ উপকারিতা ও অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য বৃষ্টির পানি ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

বৃষ্টির পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো

প্রাকৃতিক পানির উৎস হিসেবে বৃষ্টির পানি মানুষের দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামের এলাকাগুলিতে মনে করা হয়, বৃষ্টির পানি হতে পারে নিরাপদ ও পরিষ্কার। সম্প্রতি, জল সংকটের কারণে আর পরিবেশের ভালো থাকাকেও দেখিয়ে ডেকে নেওয়া হচ্ছে এই প্রাচীন রীতিটিকে। তবে, প্রশ্ন হল বৃষ্টির পানি কি সত্যিই নিরাপদ খাওয়ার জন্য চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বৃষ্টির পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো?

বৃষ্টির পানির সৃষ্টি ও সংগ্রহ পদ্ধতি-
বৃষ্টি শুরু হলে, আকাশ থেকে জল ভেসে আসে ভূমিতে। এই পানি সাধারণত গাছের ডালপালা, জানালা, বা খাতে জমা হয়। মানুষের জন্য এটি সংগ্রহ করার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ট্যাংক বা ড্রাম ব্যবহার করা হয়। এই পানির স্বাভাবিকভাবে অনেকটা পরিশোধিত প্রক্রিয়ায় যায়, কারণ পানির মাঝে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দূষক থাকলেও, বেশিরভাগ দূষণ প্রকৃতি থেকে আসে।

প্রাকৃতিক পরিষ্কার ও দূষণ প্রতিরোধের উপায়-
প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানি ভূপৃষ্ঠ থেকে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়। এ সময়, ধুলা, ধোয়ার জল বা রাসায়নিক দূষক পানিতে মিশে যেতে পারে। তাই, পরিষ্কার ও নিরাপদ পানির জন্য সংরক্ষণস্থলে গৃহস্থালি অনুসন্ধান ও নজরদারি জরুরি। জেনে রাখা দরকার, যেখানে পানি সংগ্রহ করা হয় সেখানে দূষণ যেন না ঘটে।

বৃষ্টির পানি পান করার স্বাস্থ্যগত সুবিধাঃ-
পুষ্টির উপাদান ও জৈব উপকারিতাগুলি-
বৃষ্টির পানিতে সাধারণত মিনারেল থাকে, যেমন ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এগুলি হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী। এছাড়াও, রাসায়নিক বা ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকেনা, তাই এই পানি সরাসরি পানি ছাড়া অন্য রাসায়নিক দিয়ে তৈরি পানির থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।

পরিবেশবান্ধব ও অর্থনৈতিক উপকারিতা-
বৃষ্টির পানি অপচয় কমায়। জল সংকট মোকাবেলায় এটি একটি ভালো বিকল্প। স্থানীয় পর্যায়ে যদি সবাই বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে, তাহলে পরিবেশের ওপর চাপ কমে যায়। আর এর ফলে ব্যক্তিগত খরচও কমে।

বৃষ্টির পানির নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিঃ-
দূষিত বৃষ্টির পানির সমস্যা-
যখন বৃষ্টি হয়, তখন জল পলির সঙ্গে ধুলো এবং রাসায়নিক সংমিশ্রণে দূষিত হতে পারে। এই ধরনের জল খাওয়া মানে, জীবাণু ও ভাইরাসের আক্রমণে ঝুঁকি বাড়ে। জল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, দূষিত বৃষ্টির পানি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

সংরক্ষণ ও পরিশোধন প্রক্রিয়া ব্যতিরেকে ব্যবহারজনিত ঝুঁকি-
অবৈধ সংরক্ষণ বা কোনও পরিশোধন ছাড়াই পানি খেলে, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধারণা অনেক বেশি হয়। দীর্ঘ সময় স্টোরেজের ফলে, এই জলেও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত জল পরীক্ষা ও পরিশোধন দরকার।

নিয়মিত পরীক্ষা ও পরিশোধনের গুরুত্ব-
জল কেনো, কেমন মানের তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষার প্রয়োজন। সাধারণত, জল পরীক্ষার জন্য রাসায়নিক ও ব্যাকটেরিয়া পরীক্ষা করতে হয়। বাড়িতে জল পরিশোধনের জন্য ফিল্টার, জল পরিশোধন যন্ত্র বা জীবাণুনাশক ব্যবহার খুব জরুরি।

সঠিক ব্যবহার ও সর্তকতাঃ-
নিরাপদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কৌশল-
প্রথমত, সরাসরি ছাদ ও দরজার পথে পানি সংগ্রহ করতে হবে। সংরক্ষণস্থলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মানা উচিত। স্টোরেজ ট্যাংক অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে যেন নানা দূষণ পানি প্রবেশ না করে।

পরিশোধন ও বিশুদ্ধীকরণ-
নিয়মিত ফিল্টার ব্যবহার করে পানি পরিষ্কার করা যেতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি, যেমন রিভার্স অয়মোসিস, এই কাজে খুব কার্যকর। এছাড়াও, জল ফোটানো বা জল জীবাণুনাশক দিয়ে পরিশোধন করে পান করতে পারেন।

সাধারণ সতর্কতা-
বাড়িতে বৃষ্টির পানি খাওয়ার আগে, অবশ্যই জল পরীক্ষার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ও নিয়মিত জল পরীক্ষা করাও অত্যন্ত জরুরি।

বৃষ্টির পানি দিয়ে মুখ ধুলে কি হয়

প্রকৃতির উপহার হিসেবে বৃষ্টি আমাদের জীবনে ভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ এনে দেয়। তবে, এই পানি যে একটি নিরাপদ উপায়ে ব্যবহার করতে পারি, তা নয়। বিশেষ করে, যখন আমরা মুখ ধোয়ার জন্য বৃষ্টির পানি ব্যবহার করতে চাই, তখন আমাদের বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলা দরকার। কেননা, অজান্তে অনেক রকমের বিপদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকতে পারে। এই নিবন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়েছে – বৃষ্টির পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার উপকারিতা ও বিপদ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

বৃষ্টির পানির গুণাগুণ ও সংক্রমণের সম্ভাবনাঃ-

বৃষ্টির পানির মূল বৈশিষ্ট্য ও প্রাকৃতিক উপাদান-
প্রাকৃতিক জল হিসেবে বৃষ্টি অনেক উপকারি মনে হয়। এটি সাধারণত পরিষ্কার দেখায়। তবে, ভেতরে বিভিন্ন উপাদান থাকতে পারে, যা অজান্তে সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যখন পরিবেশের দূষণ কম, তখন এই পানি সাফ হয়ে ওঠে। যেমন, স্থানে যেখানে ধূসর ক্ষয় বা ধুলাবালি কম, সেখানে বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে খুব ভালো। ঘামাচি কমাতে বহু আগে থেকেই বৃষ্টির পানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কাজ করে।

দূষিত বৃষ্টির পানির উপদ্রব ও বিপদ-
অপরদিকে, পরিবেশের দূষণ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পানির মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক ও দূষিত উপাদান মিশে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, কীটনাশক, ধূলা, ধাতু বা রাসায়নিকের সংস্পর্শে এই পানি অস্বাস্থ্যকর হয়ে পরে। এতে পানি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

জলঝরলা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি-
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, অপরিচ্ছন্ন বা দূষিত পানির ব্যবহারে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা পরজীবীরা সহজে দেহে প্রবেশ করে, নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এই সব উপাদানের কারণে পানি বা মুখ পরিষ্কার করার সময় সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।

বৃষ্টির পানির সঙ্গে সংস্পর্শে মুখের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাঃ-

সংক্রমণ ও রোগের ধরন-
বৃষ্টির পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার ফলে ডায়েরিয়া, হেপাটাইটিস এ, প্যারাঅ্যাঞ্জাইনা হতে পারে। চোখের ইনফেকশন বা ত্বকের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়। অনেক ধরনের সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া এই পানির মাধ্যমে ছড়ায়।

মুখের জন্য বিপদ ও অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি-
খাবার বা ক্ষত থাকলে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। ঠোঁট বা গাল ক্ষত তবে আরও বেশি ঝুঁকি বাড়ায়। অচিরেই ইনফেকশন বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হতে পারেন।

বৃষ্টির পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার নিরাপদ পদ্ধতি ও সতর্কতাঃ-
  • ফুটানো: পানি কমপক্ষে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এটা আপনাকে নিশ্চিত করে যে বৃষ্টির পানিতে থাকা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া মারা গেছে।
  • ফিল্টার: উন্নত মানের জল ফিল্টার বা জীববৈচিত্র্যযুক্ত ফিল্টার ব্যবহার করুন।
  • ক্লোরিন: কিছু পরিমাণ ক্লোরিন ব্যবহার করেও পানি বিশুদ্ধ করা যেতে পারে।
ব্যবহারে সতর্কতা ও সংরক্ষণ-
  • পরিশুদ্ধ পানি উপযুক্ত পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
  • পরিষ্কার ও শুকনো ড্রাম বা জার ব্যবহার করুন।
  • মুখ বা চোখে স্পর্শ করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে পানি পুরোপুরি বিশুদ্ধ রয়েছে।
দৈনন্দিন স্বাস্থ্যবিধি-
  • মুখ ধোয়ার সময় হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  • অন্য সব ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতা মান্য করুন।
সচেতনতা ও সতর্কতা, গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ-
নিরাপদে বৃষ্টি পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে কিছু জরুরি জ্ঞান ও সতর্কতা আবশ্যক। অজান্তে অনেক রোগের ঝুঁকি এড়াতে সচেতন থাকা প্রয়োজন। পানি পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে নিয়মিত। স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বারবার মনে রাখতে হবে, বিশুদ্ধ পানিই নিরাপদ। বৃষ্টির পানি ব্যবহারের আগে পরিষ্কার ও পরিশোধন করা আবশ্যক। পানি নিরাপদ করতে ফুটানো বা ফিল্টারিং প্রয়োজন। জেনে রাখুন, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং নিয়ম মেনে চলা আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

লেখক এর শেষ মন্তব্যঃ বৃষ্টির পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো- বৃষ্টির পানি পান কি নিরাপদ

বৃষ্টির পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো খুব স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে পরিণত হতে পারে, যদি সঠিকভাবে পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধকরণ না হয়। প্রকৃতি থেকে পাওয়া পানির যদি নিরাপদ ভাবে ব্যবহার হয়, তবে এটি উপকারী হতে পারে। তবে, সবসময় নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সঠিক প্রক্রিয়ায় পানি ব্যবহার করা জরুরি। সচেতনতা ও নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। নিজের স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নিরাপদ পানির অভাব এড়ানো উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url